রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি॥ বরগুনায় হঠাৎ করে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। চিকিৎসা দিতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, জানুয়ারি থেকে সোমবার পর্যন্ত জেলায় ৪ হাজার ৫৯৩ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা চারজন। এরমধ্যে বেতাগীতেই মারা গেছেন তিনজন।
ডায়রিয়ার তীব্র চাপ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে স্থান সংকটের পাশাপাশি আইভি স্যালাইনের সংকট দেখা দিয়েছে। বরগুনার জেনারেল হাসপাতাল ও বেতাগী, বামনা ও পাথরঘাটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জরুরি ভিত্তিতে ১ হাজার এমএল আইভি স্যালাইন দিয়েছেন এমপি নাদিয়া সুলতানা।
রোববার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান জানান, মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদফতর বরাবর ১ হাজার এমএল ৩২ হাজার এবং ৫০০ এমএল ২৪ হাজার আইভি স্যালাইনের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।
সিভিল সার্জন আরো জানান, হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এরআগে স্থানীয় ব্যক্তিরা আমাদের বেশ কিছু আইভি স্যালাইন দিয়েছেন। সংরক্ষিত আসনের এমপি ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্যালাইন দিয়ে সংকটময় অবস্থায় সহযোগিতা করেছেন। তবে চাহিদাপত্রের স্যালাইন আসতে ৩-৪ দিন লাগতে পারে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে।
এদিকে, বরগুনার বেতাগীতে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জনবল ও স্থান সংকট, আইভি স্যালাইনের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন দ্রুত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতাল কম্পাউন্ড, মেঝে ও সিঁড়িতেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না।
সোমবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসাধীন নতুন করে বলইবুনিয়ার আহম্মেদ হাওলাদারসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৪ জন ডায়রিয়া রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৯ জন। ভর্তি আছেন ৭৫ জন।
হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স ছবি মণ্ডল জানান, গত শুক্রবার থেকে গড়ে প্রতিদিনই ৫০-৬০ জন মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তবে দিন দিন সংখ্যা বেড়েই চলছে। বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। করোনা আতঙ্ক ও এমনিতেই হাসপতালে জায়গা নেই। তাই অনেকেই বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আয়শা বেগম নামে এক রোগী জানান, এখানে দুর্ভোগের শেষ নেই। চিকিৎসকরা কাকে রেখে কাকে দেখবেন বলাই মুশকিল। ছেলের আশঙ্কাজনক অবস্থা, তাই না থেকে উপায় নেই।
এরই মধ্য আইভি স্যালাইনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাইরের ফার্মেসি থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর জন্য স্যালাইন কিনতে হচ্ছে বেশি দাম দিয়ে। তবে বরগুনার মহিলা এমপি নাদিরা সুলতানার পক্ষ থেকে ৩০০ এবং বেতাগী উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৩০০ কলেরা স্যালাইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হস্তান্তর করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, এখন চড়া দামেও স্যালাইন মিলছে না। বেতাগী পৌর শহরের পাইকারি ওষুধ বিক্রেতা রনজিৎ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, গত মঙ্গলবার থেকে ৪-৫ দিন ধরে আইভি স্যালাইনের তীব্র সংকট চলছে। স্যালাইনের জন্য মানুষ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। উল্লেখযোগ্য কোম্পানির বরিশাল ডিপোতে চাহিদাপত্র দিয়েও স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষ এসে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছে। স্যালাইনের সংকট থাকায় যার পাঁচটি দরকার ছিল, তাকে একটি দিয়ে বিদায় করে দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply